নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায়ে যথাক্রমে ৯ বছর ও ৩ বছরের সাজা প্রদান করেছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান।
বুধবার (২ আগস্ট) বেলা ৩টার পর এই রায় ঘোষণা করা হয়।
অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদালতের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও বিকাল ৭টা পর্যন্ত একাধিক দিনে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন বিচারক। সাজা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই সাক্ষ্য গ্রহণের অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া চালু ছিল আদালতে।
২০০৭ সালের জরুরী আইনের সরকারের সময় তারেক রহমান, ডা. জোবায়দা রহমান ও তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার অভিযোগ ছিল তারেক রহমান জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং দুদকে জমা দেওয়া সম্পদের হিসাবে সেটা গোপন করেছেন। তাঁর স্ত্রী এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছিল তারেক রহমান জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে তারা সহযোগিতা করেছেন।
তবে মামলাটির অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করে তারেক রহমান ও স্ত্রী জোবায়দা রহমানের পক্ষ থেকে হাইকোর্ট বিভাগে তখনই কোয়াশিং আবেদন করা হয়েছিল। এই আবেদনের শুনানী শেষে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন একটি বেঞ্চ। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন মামলাটি বাতিল করা হবে না।
শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার দীর্ঘদিন পর ২০১৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগে মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নেয়। আপিল বিভাগের বর্তমানে সিনিয়রিটির দিক থেকে এক নম্বরে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল হাসানের বেঞ্চে তখন কোয়াশিং আবেদন শুনানীর জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। ১০ জনের বেশি বিচারককে ডিঙ্গিয়ে ওবায়দুল হাসানকে আপিল বিভাগে নেওয়া হয় এবং তাঁকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলমান।
ওবায়দুল হাসান এক রায়ে তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমানের আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে মামলাটি চলতে বাধা নেই বলে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তারেক রহমান ও স্ত্রী জোবায়দা রহমান। কিন্তু বর্তমান আপিল বিভাগ সেটি খারিজ করে দিয়ে মামলাটি বিচারিক আদালতে দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
তারেক রহমানের শাশুড়ি কোয়াশিং আবেদনে আপিল বিভাগে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তাঁর মেয়েকে দেওয়া টাকার বৈধ উৎস রয়েছে। নিজেদের সম্পত্তির আয় থেকে তিনি মেয়েকে উপহার হিসাবে টাকা দিয়েছিলেন সেটা প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ। মা’র নিকট থেকে উপহার হিসাবে পাওয়া এই টাকা এফডিআর করে রেখেছিলেন ডা. জোবায়দা রহমান। কিন্তু আওয়ামী অনুগত বিচারক এবং দুদকের হিসাবে জোবায়দা রহমান এফডিআর-এ যে টাকা রেখেছেন সেটা তারেক রহমানের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ এবং তাঁর স্ত্রী সেই সম্পদ গোপন করতে সহযোগিতা করেছেন। একদিকে মেয়েকে প্রদেয় টাকার বৈধ উৎস প্রমাণিত হওয়ায় সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে একই টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে!
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এই মামলাটি বিশেষ জেলাজজ আদালতে শুনানী গ্রহন করা হয়েছে অতি দ্রুততার সাথে। তারেক রহমানের পক্ষে কোন আইনজীবীকে শুনানীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাদেরকে পলাতক দেখিয়ে মামলাটির একতরফা শুনানী গ্রহণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র দুর্নীতি দমন কমিশন এবং আওয়ামী আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এই মামলার শুনানী হয়েছে বিশেষ জেলাজজ আসাদুজ্জামানের আদালতে।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে ঢাকার জেলাজজ আদালত প্রাঙ্গনে বুধবার (২ আগস্ট) নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল থেকেই মোতায়েন করা ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
এদিকে বিএনপি সমর্থক একদল আইনজীবী বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মুখে কালো কাপড় বেধে এই রায় ঘোষণার প্রস্তুতির প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান করছিলেন। তারা এই রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে বিভিন্ন রকমের শ্লোগান দেন তখন।
Leave a Reply